অবতক খবর,৯ জানুয়ারি: আলোরানি সরকার। ২০১৯-এর পর তাঁর যে দলের প্রতি ভূমিকা তা লক্ষ্য করেছিলেন মানুষ। যে সময়ে দলের নেতা কর্মীরা দলের মিটিং মিছিল ডাকতে ভয় পাচ্ছিল, অর্থাৎ যখন অনেকেই বিজেপিতে যোগদান করেছিল সেই সময়ে বীজপুরে মহিলাদের মধ্যে একমাত্র আলোরানি সরকার তিনি এগিয়ে এসেছিলেন। জায়গায় জায়গায় তৃণমূলের পতাকা লাগানো থেকে শুরু করে নিজের বাড়িতে মিটিং,সবই তিনি করেছিলেন সাহস দেখিয়ে। তাঁর বাড়িতে রাজ্য তথা জেলা নেতৃত্বরা এসেছিলেন এবং মিটিং করেছিলেন। ফেরার পথে তাদেরকে বিজেপির পতাকা দেখিয়ে স্লোগানও দেওয়া হয়। কিন্তু থেমে থাকেননি আলোরানি সরকার। তিনি একের পর এক লড়াই চালিয়ে গেছেন। দলের হয়ে এই অঞ্চলে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেইসময় দলের অনেক পুরনো নেতৃত্বরাও তাঁর বাড়িতে বৈঠক করেছিলেন। ২০১৯-এর পর আলোরানি সরকারের বাড়িতে যখন জেলা নেতৃত্বরা আসেন তখন তাদের দেখেই এই অঞ্চলের কর্মীদের মধ্যে একটা এনার্জি আসে। এরপর কাঁচরাপাড়ার মধ্যে সুজিত দাস এবং আলোরানি সরকারের নেতৃত্বে শুরু হয় রুখে দাঁড়ানোর লড়াই। তাঁরা হার না মানার আওয়াজ তোলেন। কিন্তু তাঁরা দল ছাড়েননি। তাঁর বাড়িও ভাঙচুর হয়। এরপর অনেক ওঠানামা দেখেছেন তিনি। পরবর্তীতে দেখা যায় যারা তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করেছিল তারাই তৃণমূলে যোগদান করে। দেখা গেছে,তারাই এখন বড় লিডার।

২০১৯-এর পর কেটে গেছে বেশ কয়েকটি বছর। এই নতুন বছরের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,দলের পুরনো নেতা কর্মীদের সম্মান দিতে। তাঁর এই কথাকেই সম্মান জানিয়ে এক মিলন উৎসবের আয়োজন করলেন আলোরানি সরকার। সেই মিলন উৎসবে নব্য-পুরনো সকল তৃণমূল কর্মীরা উপস্থিত হন। সাংসদ অর্জুন সিং থেকে শুরু করে প্রাক্তন সভাপতি,প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং প্রায় ২ হাজার কর্মীরা উপস্থিত হন। দল ক্ষমতায় রয়েছে,অথচ সেই দলেরই ক্ষমতাশূন্য কর্মীদের নিয়ে এই মিলন উৎসব অনুষ্ঠিত হলো কাঁচরাপাড়ায়। এইসকল কর্মীদের ইন্ধন যোগালেন আলোরানি সরকার।

এ প্রসঙ্গে আলোরানি সরকার বলেন,ক্ষমতাশূন্য এই পুরনো কর্মীরাই একমাত্র জানেন কিভাবে সিপিএমকে উৎখাত করা হয়েছিল। মার খেয়ে,ঘর ছাড়া হয়ে তারা দলকে ঘর পাইয়ে দিয়েছিলেন অর্থাৎ ক্ষমতায় এনেছিলেন। বর্তমানের বড় লিডাররা তাদের সম্মান দিচ্ছেন না, কিন্তু এটা চিরন্তন সত্য যে,তাদের জন্যই দল ক্ষমতায় এসেছে এবং ক্ষমতায় রয়েছে। তাই,তাদেরকে বাদ দিয়ে,তাদেরকে সরিয়ে কোনকিছুই হবে না।

এই মিলন উৎসব করে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছেন। মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন যে,২০১৯-এ তিনি যে লড়াই দিয়েছিলেন,সেই লড়াই কি তিনি ফের ২০২৪-এ দেবেন বা দিতে পারবেন?

এদিন যখন সাংসদ অর্জুন সিং গান্ধীমোড় থেকে হেঁটে আলোরানি সরকারের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন তখন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বেরিয়ে আসেন তাঁকে দেখতে। পাশাপাশি সাংসদও তাদেরকে নমস্কার জানান।
এইরকম একটি মিলন উৎসব করার সাহস দেখালেন আলোরানি সরকার।‌ একদিকে সুজিত দাস এবং অন্যদিকে আলোরানি সরকার, তাঁরা দেখিয়ে দিলেন সাধারণ কর্মী,বুথ কর্মী থেকে শুরু করে সাংসদকে এবং পুরনোদের যোগ্য সম্মান কিভাবে দিতে হয়।

আলোরানি সরকার বললেন,’ভোট ফর অর্জুন’ অর্জুন ছাড়া এই বেল্টে কেউ জিততে পারবে না। কারণ অর্জুনকে আটকানো মুশকিল। কে কি বলল,কে কি ভাবল তাতে কিছু যায় আসে না। দল কিভাবে এই সিট পাবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।‌কারণ আমরা চাই না বারাকপুরকে বিজেপির হাতে তুলে দিতে। অনেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে বারাকপুরকে বিজেপির হাতে তুলে দিতে, কিন্তু আমরা নিঃস্বার্থ লড়াই লড়ব। আমরা অর্জুন সিংকে ব্যারকপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জেতাবোই।

এদিন অর্জুন সিংকে অনেক মহিলা কর্মীরা সংবর্ধনা জানান। তাঁর উপস্থিতি এবং দুর্দিনে যারা দলের সৈনিক ছিলেন তাদের পাশে অর্জুন থেকে লড়াই করার নতুন রসদ জোগান।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, যাদেরকে মানুষ অধিকারী ঘনিষ্ঠ বলেই চেনেন তারাও লুকিয়ে চুরিয়ে এদিনের এই মিলন উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আবার অনেকেই প্রকাশ্যে যোগ দিয়েছেন।