আজ বইমেলার শেষ দিন

বইমেলায় ফ্যাসিবাদী ও রাষ্ট্রশক্তির হামলা

মধ্যবিত্ত সুখঃ
আমরা বইমেলায় যাবো
তমাল সাহা

আমরা বইমেলায় যাবো।
নিজের বই প্রকাশ হয়েছে যুগ যুগ জিও অথবা উলঙ্গ রাজা মঞ্চে
আর কবিতা কোন কোন বইমেলা সংখ্যায় বেরিয়েছে
তা ঘটা করে ফেসবুকে মুখ দেখিয়ে বলবো।

আমরা শীতকাব্য লিখবো। তোমাকে নিয়ে পচা পচা প্রেম পদ্য লিখবো।
সেই জ্যোৎস্না চাঁদ আকাশ পশম লিখবো
নদীর মতো তোমার শরীর
ঊর্ধ্বগতি মধ্যগতি নিম্নগতি নিয়ে লিখবো
উপরের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্রদের সঙ্গে কথা বলবো মাটির সঙ্গে বলবো না যদি ধুলো লেগে যায়!

একদিন তো পরিবার নিয়ে বইমেলায় যাবোই
ছেলেপুলের হাতে কয়েকটা বই কিনে দেবো
কলকাতা বইমেলা লেখা চটের ব্যাগ কিনবো
কিছু কিনি আর না কিনি তো
কমপক্ষে ৮০ টাকায় চার টুকরো আলুর দম দিয়ে দু পিস লুচি খাবো।
মেয়ে যেন গোঁসা না হয় তার জন্য তার ইচ্ছেমতো কেক কিনে দেবো, মো মো খাওয়াবো।
মতিগতি যাতে ভালো হয়
মস্কো থেকে পন্ডিচেরি কিনে দেবো, মনোবিদের লেখা ভালোবাসার বিষাদ কিনে দেবো।

বড় বড় কী সব মঞ্চ আর অডিটোরিয়াম আছে না!
সেখানে একটু না ঢুকলে চলে,
বোদ্ধাটোদ্ধা মনে হয় নাকি!
সেথায় বড় বড় দালাল মাতব্বরদের কথা গিলবো
দূরবীন দিয়ে মানবজমিন দেখবো
বই পড়ার সার্থকতা শিখবো
পারলে গিল্ডের মাতব্বরদের সাথে এমনভাবে মিশিয়ে স্মার্টফোনে ছবি তুলবো যেন ওরা আমার বন্ধু
ওরা বন্ধু না হলে আমার জীবনটাই বৃথা যাবে!

বইমেলায় বিরুদ্ধস্বর, প্রতিবাদের দিকে ভিড়বো না
পুলিশের লাঠিচার্জ হবে, পুলিশ মেয়েদের হেনস্তা করবে, মেনে নেবো।
মানুষ মারা যুদ্ধে ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা যাবে না
প্রীতিলতার পাঠশালা, ভগৎ সিং-এর পাঠশালা, আশু-তিমিরের পাঠশালার সক্রিয়রা ‘চরকি’ নামের বারুদ পত্রিকা বেচতে পারবেনা
রাজনৈতিক বন্দীমুক্তির দাবিতে মিছিল করা যাবে না
লিটিল ম্যাগাজিনের শিবির থেকে
ছোট্ট প্রকাশককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে
আমরা চুপ থাকবো!

এসব খুবই ছোটখাটো ব্যাপার
আমরা নাক গলাবো না, প্রতিবাদ করবো না
আসলে এখন নীরব থাকাটাই খুব জরুরী, এটা তোমাকে শিখতে হবে।

অত অস্থির হও কেন? চুপ থাকো!
মার খেয়ে খেয়ে সহিষ্ণুতায় পোড় খাও,সহ্যশক্তি বাড়াও!

বইয়ে কী থাকে? শব্দ থাকে, কথা থাকে
মুখে কী থাকে? শব্দ থাকে, কথা থাকে, স্লোগান থাকে
শব্দশক্তিতে কী থাকে? আগুন থাকে।

শীতে বইমেলা হবে, আমরা আগুনের স্বর লিখবো না!