আজ উল্টোরথ—

শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি প্রাচীন রথ

তমাল সাহা

৪ঠা জুলাই ছিল শুভ রথযাত্রার দিন। সেদিন কাঁচরাপাড়ার রথযাত্রার কথা লিখেছিলাম। আজ উল্টো রথের দিন। একটি পুরানো, ঐতিহ্যশালী রথের কথা লিখি।

সেটি ছিল পঞ্চাশের দশকের রথযাত্রা। কাঁচরাপাড়া শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র স্টেশন রোড এখন জমজমাট। সেই স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে হত রথযাত্রা। এই রথযাত্রা ছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগ। মোটা মোটা কাছিতে পড়তো টান আর চলতে শুরু করতো রথযান। এটাই তো কাঁচরাপাড়ার ইতিহাস।

রথের মেলা এক সার্বজনীন উৎসব। এখানে কত কি পাওয়া যায়। তালপাতার ভেঁপু,পাপড়, বেলুন। সঙ্গে পাওয়া যায় গৃহস্থালির জিনিসপত্র। জিলিপি,কাঠি গজা, বাদাম ভাজা,নারকেল-সুপারি-হরেক ফুলগাছের চারা।এখন মন্ডা মিঠাই আইসক্রিম নাগরদোলা সবই রথের মেলার বিষয়।

যাই হোক,একটি অপ্রিয় সত্য কথা লিখি। এখন দোকানিরা বসে। খুব বড় দোকানি নয়, ছোটখাটো দোকানি এদের মেলায় বসতে রোজই কিছু তোলা দিতে হয় বা মেলার কদিনের জন্য একটা দাদন দিতে হয়। মেলা, যেখানে মিলনের কথা সেখানেও চলে তোলা। রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লোক উৎসবও রাজনৈতিক দখলদারিতে চলে যায়। জীবনে মেলার উপযোগিতা কি– এই বিষয়ে রচনা লিখতে দিলে দাদন ও তোলাবাজির কথাও উঠে আসবে।

যাক সেসব কথা। রাখাল চন্দ্র পাল বাগমোড় সংলগ্ন অঞ্চল মল্লিকবাগে বাস করতেন। তিনি বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন।‌কথিত আছে তিনি লেঠেল দল পুষতেন। ধনবান ব্যক্তিদের তখনকার দিনে ‌লেঠেল পোষা ঐতিহ্য ছিল। সুন্দরবন অঞ্চলে ও গঙ্গার ওপারে ভূ সম্পত্তি করেছিলেন তিনি।

মল্লিকবাগে পঞ্চাননতলার উত্তরদিকে বিরাট দোতলা বাড়িতে বাস করতেন। কাঞ্চনপল্লীতে তার গোলদারির দোকান ছিল। কাঁচরাপাড়ার স্টেশন রোডের দক্ষিণ দিকে তার এক লম্বা বাড়ি এখনও আছে। সেই বাড়িতে এখন তৃতীয়-চতুর্থ প্রজন্ম বাস করছেন। রাখাল চন্দ্র পালের দুই বিবাহ ও দুই কন্যা। বড় কন্যার পুত্র দেবেন্দ্র নাথ কুন্ডু,মল্লিক বাজার অঞ্চলের এবং ছোট পুত্র গোপী কুন্ডু সুন্দরবনের সম্পত্তি পান। ছোট কন্যার স্বামীর নাম শম্ভুচরণ পাল। তিনি কাঁচরাপাড়া স্টেশনের বাড়ি ও গঙ্গার ওপারের সম্পত্তি পান। আমি এই তথ্য জেনেছি প্রয়াত সেই দীর্ঘদেহী ‘হোয়াট নট’ মানুষ,যাকে আমি বলি গোষ্ঠ দা, সেই গোষ্ঠবিহারী দে-র কাছ থেকে। তিনি অঞ্চলের অনেক পুরানো তথ্য জানতেন। তিনি ছিলেন পর্যটক ও ডাকটিকিট, দস্তখত ও বিভিন্ন পুরাতনী সংগ্রাহক।

রাখাল চন্দ্র পালের একটি পিতলের রথ ছিল। সেটির স্বত্ব পান শম্ভু পাল। পঞ্চাশের দশকে রথযাত্রার দিনে স্টেশন রোডে ওই রথযাত্রা হত এবং উল্টোরথের সময় বাড়ির অন্দরে চলে যেত। শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন প্রাণময় রথযাত্রা উপভোগ করতেন কাঁচরাপাড়ার মানুষ।