বিনয় ভরদ্বাজ, অবতাক খবর, ৪জুনে :: অর্জুন সিং-কে রাজ্য কমিটিতে জায়গা করে দিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে যে,তারা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলকে অনেকটাই গুরুত্ব দিচ্ছেন। শুধু অর্জুন সিং নয় ফাল্গুনী পাত্রকে রাজ্য কমিটির সম্পাদক করেছেন তারা। অর্থাৎ একই অঞ্চল থেকে দু’জনকে রাজ্য কমিটিতে স্থান দিয়ে বিজেপি আরো পরিষ্কার করে দিয়েছে যে বর্তমানে তারা নবাগত ও প্রবীণ দুই বিজেপি গোষ্ঠীকে একসঙ্গে নিয়ে বিধানসভার নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ‌

ব্যারাকপুরের পাশাপাশি সমগ্র উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ২৫টি বিধানসভার সিটকে জিতিয়ে আনতে এবং সংগঠনকে চাঙ্গা করে তোলার দায়িত্ব বর্তমানে অর্জুন সিং,ফাল্গুনী পাত্র ও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আগত এবং পদপ্রাপ্ত সব্যসাচী দত্তকে সামনে রেখে লড়তে চাইছে বিজেপি। কোন পদ ছাড়াই অর্জুন সিং যেভাবে একাই অঞ্চলের সমস্ত তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিয়েছেন, তাই এখন অর্জুনকে পদে বসিয়ে বিজেপি ২৫টি বিধানসভাকে দখল করার ছক তৈরি করছে।

যেহেতু অর্জুন সিং দীর্ঘদিন তৃণমূলে থেকে জেলার রাজনীতি করেছেন,সেই কারণে জেলার কোন জায়গায় তৃণমূলের কোন নেতা সক্রিয় এবং কোথাকার মাটি নরম ও কোথায় শক্ত সেটা তাঁর হাতের মুঠোয়। তাই এই নির্বাচনে অর্জুন সিং হচ্ছেন জেলা বিজেপির মূল সেনাপতি।

বিজেপির এক বড় নেতার দাবি, তৃণমূলের জেলা নেতাদের মধ্যে অর্জুনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মত ক্ষমতা বা সাহস কারোর নেই। উত্তর ২৪ পরগণার বেশিরভাগ তৃণমূল নেতারা ভীষণ ভীতু। অল্প চাপ সৃষ্টি করলেই তারা ঘরে ঢুকে পড়ে। তাছাড়াও অর্জুন জানেন যে,কোন নেতাকে কিভাবে কতটা চাপ দিয়ে ঘরে ঢোকানো যায়। ‌তাই এবার কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা অর্জুনকে সামনে রেখেই দলকে জেতানোর পরিকল্পনা করেছেন।

অন্যদিকে বিজেপি রাজ্য কোর কমিটির সদস্য হয়ে এখন অর্জুন নিজেকে আরও বেশি সক্রিয় ও আরো বেশি শক্তিশালী মনে করছেন। তিনি ইতিমধ্যে সমস্ত নবাগত ও প্রবীণ বিজেপি নেতা কর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, এবার ২০২১-এর জন্য তৈরি হোন। ২০১৯-এর নির্বাচনে তিনি একাই লড়ে লড়াই জয় করতে পেরেছেন। ‌এখন সমগ্র বিজেপী দল, কর্মী, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা সবকিছুই তার কাছে আছে। তাই এবার তাঁর লড়াই ও জয় আগে থেকে অনেক বেশি সহজ হয়েগেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, অর্জুন যতটা ডেস্পারেট, তাতে তিনি যেটা বলেন সেটাই করেন। ‌ তাছাড়া তৃণমূলে এতটাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব  ও খাওয়া খাই যে মানুষ তাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া  তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল কে অর্জুন ভালোভাবে কাজে লাগাতে ভালোই জানেন, কারণ এটা বিজেপির বড় অস্ত্র।

শুধু তাই নয় তৃণমূল নেতারা বারেবারে লোকসভা নির্বাচনের পর তাদের অবস্থা নিয়ে যেখানেই বক্তব্য রাখেন, সেখানেই তারা বলেন যে ” ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনের হাতে ক্ষমতা ছিল প্রশাসন পুলিশ তাদের হাতে ছিল না তাই বিজেপি এত বাড়বাড়ন্ত করেছে”। তৃণমূল নেতাদের এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় যে তারা মানুষের ভোটের নয় পুলিশই বা প্রশাসনিক ক্ষমতার জোরে তৃণমূল আবার ক্ষমতায় আছেন। লোকসভা নির্বাচনের পর যে ক্লাব সংগঠন সব তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গেছিল তারা পুলিশের ক্ষমতা ব্যবহার করে আবার ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষের ক্ষমতায় তারা আর পারেনি। অর্থাৎ তারা মানুষকে পরিষ্কার নিজেই এই বার্তা  দেন যে শুধু পুলিশ প্রশাসনের ক্ষমতা জেনেই তারা ক্ষমতা দখল করতে পেরেছেন মানুষের জন্য নয়। তারা একথা বারেবারে বলে নিজেই স্বীকার করে নেন।

বিজেপির এক প্রবীণ নেতা দাবি নির্বাচনের সময় আবার নির্বাচন কমিশনের হাতে ক্ষমতা থাকবে ।তখন এই জনতা আবার তৃণমূলকে জব্দ করে  বিজেপিকে ক্ষমতায় আনবে। তিনি দাবি করেন যে এবার মানুষ যখন ক্ষমতা দেখাবে তখন ফের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আসতে পারবেনা তৃণমূল কারণ এটা 2019 নয, লোকসভা নির্বাচন নয়। এবার 2021 বিধানসভার নির্বাচন। এবার নির্বাচনে যখন মানুষ ক্ষমতা কেড়ে নেবে তখন পুলিশের ক্ষমতায তারা আর ফিরতে পারবেন না কারণ পুলিশও তখন মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।

অবশ্যই এই নেতার বক্তব্য থেকে একথাটি পরিষ্কার যে এবার যে অর্জুন নির্বাচনী মাঠে নামছেন সেটা আর তৃণমূল থেকে বেরিয়ে আসা পুলিশের হয়রানির শিকার বা দলবল হীন অর্জুন নয়। এবার বিজেপির কোর কমিটি নেতা ব্যারাকপুরের সাংসদ এবং সুবিশাল দলের ক্ষমতাধারী অর্জুন।

ইতিহাস ভুলে গেলেও চলবে না যে একা অর্জুন কে হারাতে মুখ্যমন্ত্রী ও তার ভাইপো যুব সভাপতি সহ 7 জন মন্ত্রী ও বহু তৃণমূল নেতাদের মাঠে নামিয়ে, পুলিশ ফোর্স নামিয়ে তাকে জব্দ করা যায়নি । তার লক্ষ্য থেকে সরানো যায়নি। তৃণমূলের এক অর্জুনকে সামলাতে দম বেরিয়ে গেছিল কিন্তু এখনকার এই নতুন অর্জুন সেই অর্জুন আর নেই । এই অর্জুন কে হারাতে বা তার জেলার বিধানসভাগুলির জয়ের লক্ষ থেকে সরাতে আদৌ তৃণমূল পারবে কি ? এখন এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন।