এবং শিশু দিবস / তমাল সাহা

দাদা,আজ শিশু দিবস।
এখনো পোস্ট দিলেন না তো কিছু।
আমি হতবাক,বুঝি কিছু পাঠক নিয়েছে আমার পিছু। আমি এইসব পাঠকদের খুব ভয় পাই,তারপর বাড়ি গিয়ে কিছু কথা লিখে যাই। শিশু দিবসের কথা শুনুন

এবং শিশু দিবস
তমাল সাহা

দিনকে তো দিবস বলে,
প্রতিদিনই দিবস।
আমরা সকলেই দিবসের বশ।
আজকের দিন অমাবস্যা,
কালকের দিন পূর্ণিমা,
অমুক দিন প্রতিপদ,এই তো জানি।
অথচ —
আজ শিশু দিবস,কবে যেন নারী দিবস,
আবার কোনোদিন যুব বা শিক্ষক দিবস,
সবার উপর বিশ্বশান্তি দিবস—
কতরকম দিবসের নাম যে শুনি।

কেউ যদি আমায় বুঝিয়ে দিতে পারে,
এইসব দিবসের মানে,
শুনে রাখো,
নিশ্চিত আমি কানধরে ওঠবস করবো
কড় গুনে গুনে।

যাদের যত করা হয় অসম্মান,
তাদের নামেই দিবসের গুণগান।
আমি যদি না দিতে পারি এর প্রমাণ
যা ইচ্ছে গালি দিন,
সয়ে যাবো সব অপমান।

ধর্ষণক্লান্ত এই উপমহাদেশ,
নারীর কোথায় সম্মান?
কোনদিন আপনারা যেন
নারীদিবসের পতাকা ওড়ান?
কোথায় মহিলা সমিতি,
কোথায় মানবাধিকার কমিশন?
নারী নির্যাতনই যেন ভারতীয় মিশন!

প্রতিদিনই তো শিক্ষকের দিন,
শিক্ষক দিবসেই কেন শিক্ষককে
পড়িমরি এতো মান্য?
বাকি দিনগুলি কি তবে সরগরম,
তাকে অশ্রদ্ধার জন্য?

যুবাদের সঙ্গে মিশে যায় বিবেকানন্দ
যুব দিবসের দিন।
দেশ জুড়ে বেকারের কারখানা—
যুবদের হাতে নেতাদের ছাতা
যুব দিবসের পতাকা উড্ডীন।

বিশ্ব দাদাগিরি বজায় রাখতে
অস্ত্র নির্মাণের লড়াই।
কোনদিন যেন আমরা আবার
শান্তি দিবসের নামে
সাদা পায়রা-পতাকা-বেলুন ওড়াই।

দিবসের নামে এসব লোক দেখানো শয়তানি,
কোন স্বার্থে,কারা কোথা থেকে
কেউ কি জানে,করে আমদানি?

এবার যাই একবার শিশুদের পাশে।
অস্কার ওয়াইল্ড লিখেছেন,
শিশুরাই বিশ্বের সেরা ফুল হয়ে হাসে।

আজ শিশু দিবস। খুলি ফেসবুক—
দেখি মায়েরা খুব হাসিখুশি,
পোস্ট করেছে
নিজেদের বাছার গুডি গুডি মুখ।
সকালে গিয়েছি স্টেশনে কাগজ কিনতে,
দেখি প্ল্যাটফর্মে এক শিশু কাঁদছে
কোনোমতে চুষে যায়
কাঠির মতো শরীর, চোখমুখ
বসে যাওয়া মায়ের শুকনো বুক।
আমি কি সভ্য নাকি?
দেখি ঢোলা ব্লাউজ,খোলা বুক।
স্তন নাকি, এতো চুপসানো মাই!
কোথায় দুধ, শিশুর পেটে খিদে—
কিছু নেই আধারে
রাক্ষুসে বাচ্চা কেঁদে যায়, খাই খাই।

আর একটু এগোই দেখি,
শিশুটি দিয়ে যায় শ্রম চায়ের দোকানে—
টোস্ট পাউরুটি ঘুগনি।
এঁটো প্লেট কি খিদে মানে
ধোবার আগে চেটে নেয় তক্ষুনি।

ভাটায় ইট বয়ে নিয়ে যায় মাথায়
শিশুগুলি তোমার মহান দেশে।
ইটের গায়ে খোদাই করা কোম্পানি—
মার্কা ইন্ডিয়া।
আজ শিশু দিবস,
জহর কোট বোতামসাঁটা গোলাপ কুঁড়ি,
একদম ফুট কর লাল হো গিয়া।

সান‍্যাল চরে বেআইনি বারুদ ঘর
বাজি বানায় শিশু,
হাতমুখ মশলা লেগে অ‍্যালুমিনিয়াম রুপোলি।
আজ শিশু দিবস, রাস্তায় শিশুদের মিছিল।
আজকের শিশু ভবিষ্যতের নাগরিক—
উদ্দাম শব্দে বেজে যায় ব্যান্ডগুলি।

আজ যেন বিখ‍্যাত কার জন্মদিন,
তাই শিশু দিবস।
স্বাধীন দেশ!আমি আজন্ম আহাম্মক
নিন্দুকের যতসব বেফালতু বকবক।
মাথা নেই মুন্ডু নেই লিখে যাই
বিতিকিচ্ছিরি এইসব।